Music

Header Ads

Header ADS

Custom Widget

test

‘নির্বাচনের বছরে সরকারকে বিপাকে ফেলবে নতুন শিক্ষাক্রম’


নতুন শিক্ষাক্রমে বদলে যাচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। বন্ধ হচ্ছে পরীক্ষা। থাকছে না জিপিএ-নম্বর নিয়ে মাতামাতিও। মূল্যায়নে আসছে চিহ্ন বা সূচক, যা নিয়ে শঙ্কা, সংশয়ের শেষ নেই অভিভাবকদের। অভিযোগ-অনুযোগ রয়েছে শিক্ষকদেরও। এ শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন অভিভাবকরা। গণস্বাক্ষরের পর ঘোষণা দিয়েছেন মানববন্ধন কর্মসূচির। শিক্ষাবিদরাও কেউ কেউ বলছেন- রাজনৈতিক উত্তাপের বছরে সরকারকে বাড়তি চাপে ফেলতে পারে নতুন শিক্ষাক্রম।

এসব বিষয়ে কথা বলেন অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান। ২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রম প্রণয়ন কমিটির সামনের সারিতে ছিলেন তিনি। যেটি সৃজনশীল শিক্ষাক্রম পদ্ধতি বলে পরিচিত এবং এখনো চলমান।

####

০১. শিক্ষাক্রম নিয়ে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা অনেক। ২০২২ সালে নতুন শিক্ষাক্রম হলো। নতুন নিয়মে এ বছর কয়েকটি শ্রেণিতে পড়ানোও হচ্ছে। আপনার মতামত কী?

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান: শিক্ষাক্রমের সব দেখছি-শুনছি। মূল কথাটা হলো- যিনি ভাত রাঁধতে জানেন না, যদি তাকেই কাচ্চি-বিরিয়ানি রান্না করতে দেওয়া হয় তাহলে সেটা তো কাচ্চি-বিরিয়ানি হবে না, সেগুলো সব জাউ হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের অবস্থাও তাই। আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো—এটা (শিক্ষাক্রম) যারা করছেন, তারা লেজে-গোবরে করে ফেলছেন। সাফ-সুতরা করতে বহু সময় লাগবে। ভুগতেও হতে পারে।

####


০২. আপনারা ২০১২ সালে সৃজনশীল শিক্ষাক্রম করেছিলেন। সেটি এড়িয়ে যাওয়ায় কী আপনি ক্ষুব্ধ?

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান: মোটেও না। আমি সব সময় ভালোটাকে গুরুত্ব দেই। সেটা যেই করুক। একই সঙ্গে সক্ষমতাকেও বিচার-বিশ্লেষণ করি। আপনাকে কারিকুলাম করতে হবে দেশ-জাতির জন্য উপযোগী করে। হ্যাঁ, আমার লক্ষ্য থাকবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। তবে আমার দেশের শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চিন্তা-ভাবনা মাথায় রেখে এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আমার এমন মতামত। বিদ্বেষ বা হিংসা থেকে নয়।

####

০৩. ২০১২ সালে আপনাদের দাঁড় করানো শিক্ষাক্রম কাঠামোও ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করেন অনেক শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। সৃজনশীল কাঠামো নিয়ে আপনার মতামত কী?

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান: ২০১২ সালের কারিকুলাম (শিক্ষাক্রম) যেটা আমরা করে দিয়েছিলাম, সেটাতে কিছু নতুনত্ব আনা হয়েছিল। ২০১৩ সাল থেকে এ কারিকুলামটা চালু করা হয়। এখন পর্যন্ত সেটাই চলছে। ওই কারিকুলামের নতুনত্ব শিক্ষকরা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। দফায় দফায় ট্রেনিং (প্রশিক্ষণ) দিয়েও তাদের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। এটাই বাস্তবতা।

####

০৪. সৃজনশীল শিক্ষাক্রমের চেয়েও তো এখন শিক্ষার্থীদের বেশি কাজ। বলা চলে পুরোটাই ব্যবহারিক বা হাতে-কলমে শেখা। এটা কতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন?

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান: এখন যে কারিকুলামটা তারা করছেন, যেভাবে মূল্যায়নের ব্যবস্থা করছেন, সেটি বিদেশি। অত্যন্ত অ্যাডভান্সড কান্ট্রি (অতি উন্নত দেশ) এটা ফলো করে। আমি মনে করি আমাদের শিক্ষকদের পক্ষে, আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে, শিক্ষা বোর্ডের পক্ষে নতুন এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

####


০৫. তাহলে কী আমরা শিক্ষাক্রম কাঠামোতে পিছিয়েই থাকবো। সামনে এগোনোর চিন্তা-ভাবনা রেখে একই অবস্থানে থাকবো?

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান: আমি মোটেও সেটা বলছি না। আমাদের ধাপে ধাপে এগোতে হবে। এক লাফে নারিকেল গাছের মাথার ওপরে চড়া যাবে না। এ শিক্ষাক্রম নিয়ে যা হচ্ছে, তাতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থাটাকে অনেকটা ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। সব ভালো কি একদিনে অর্জন করা যায়? নাকি ধাপে ধাপে করতে হয়? ফলদ কোনো বৃক্ষ কি একদিনে ফল দেয়? নাকি বড় হয়, ফুল ফোটে, তারপর ফল ধরে?

####

অথচ শিক্ষকদের এখনো তৈরি করা হলো না। ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক এমনকি সোসাইটিকে উপযোগী করে গড়াও হলো না। অথচ তাদের ওপর অতি উন্নত দেশের শিক্ষাক্রম এনে চাপিয়ে দেওয়া হলো। সেটা কতটা বাস্তবসম্মত সেই প্রশ্ন রাখতে চাইবো আমি। অতএব যারা এটা করছেন, চালুও করে ফেলছেন, তাদের বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত ছিল।

####

০৬. শিক্ষকরা অনেকে প্রশিক্ষণ পাননি। অনেকে আবার প্রশিক্ষণ নিয়েও বুঝে উঠতে পারেন না। প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ায় কোনো গলদ আছে কি না?

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান: আমি তো বলি— এখন যে শিক্ষকরা দেশের প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরে পড়াচ্ছেন, তাদের দিয়ে কোনো শিক্ষাক্রমই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্টেজে (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে) যেসব শিক্ষক রয়েছেন, তাদের ১৫-২০ শতাংশ যোগ্যতাসম্পন্ন। আর ৮০-৮৫ শতাংশ শিক্ষককে যতই ট্রেনিং দেন, তাদের দিয়ে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে পারা যাবে না।

####


০৭. নতুন শিক্ষাক্রম প্রণেতাদের একজন জিপিএ-গ্রেডিং পদ্ধতিকে নির্বুদ্ধিতা ও কাণ্ডজ্ঞানহীন বলছেন। জিপিএ-নম্বরের পরিবর্তে চিহ্ন বা সূচকভিত্তিক মূল্যায়নের পথে হাঁটছেন তারা। আপনি এটিকে কীভাবে দেখেন?

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান: বিশ্বের বহু দেশে জিপিএ বা গ্রেডিং পদ্ধতিতে মূল্যায়ন সিস্টেম (পদ্ধতি) এখনো চালু রয়েছে। এটির মানোন্নয়ন করা যায়, সংস্কার করা যায়। হুট করে তুলে দেওয়া, বাতিল করে দেওয়া একটা বেকুবের মতো কাজ হবে।


উনি (নতুন শিক্ষাক্রম প্রণেতা অধ্যাপক মশিউজ্জামান) যেটা বলছেন, সেটাই কাণ্ডজ্ঞানহীন কথা। আমি আবারও বলছি- উনি এ সম্পর্কে যে কথাটা বলছেন, গ্রেডিং পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করাটা নির্বুদ্ধিতা ও কাণ্ডজ্ঞানহীন, ওনার এ মন্তব্যটাও কাণ্ডজ্ঞানহীন। বিশ্বের বহু উন্নত দেশে গ্রেডিং সিস্টেম চালু আছে এবং থাকবে।


০৮. পরীক্ষা না থাকলেও নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের কাজের চাপ বেড়েছে। পুরোটাই কাজনির্ভর। বিভিন্ন সামগ্রীর প্রয়োজন হচ্ছে। অভিভাবকের খরচও বাড়ছে। এটাকে কীভাবে দেখেন?

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান: কাজ দেওয়া হোক। কিন্তু সেটা ছাত্র-ছাত্রীদের বহন ক্ষমতা বা করার মতো সক্ষমতার মধ্যে দিতে হবে তো। কাজ দেওয়াটা আমি খারাপভাবে দেখি না। ২০১২ সালের যে কারিকুলাম আমরা করেছিলাম, সেটাতেও আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নতুন কিছু কাজ রেখেছিলাম। শিক্ষকরা সেগুলো নিজেরা ভালোমতো বুঝে করাতে পারেননি।

সব বিষয়ে কাজ দিয়ে রাখবেন, তার ঘুম নেই? খাওয়া-দাওয়া নেই? কেবল কাজই করো, কাজই করো—এটা তো হতে পারে না। মূল কথা হলো- নতুন শিক্ষাক্রমে পড়ালেখায় কোনো সমন্বয় নেই।

####

০৯. শুরুতেই আপনি বলেছেন— এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আবার অভিভাবকরাও এর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন। সামনে নির্বাচন। একই সময়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থী-অভিভাবক মাঠে নামলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে যাবে কি না, আপনার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাই।

অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান: প্রশ্নটা ভালো। তবে এটা তো আপনারা লিখছেন না। খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো- জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। একে তো নির্বাচনের বছর, আবার জানুয়ারির প্রথমদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে বইপত্র তুলে দেওয়া হবে, ক্লাস শুরু হবে। যার মধ্যে নতুন এ শিক্ষাক্রম পুরোদমে চালু হবে।

####

আমি স্পষ্ট ও দৃঢ়ভাবে বলছি- বর্তমান সরকারকে তারা (শিক্ষাক্রম প্রণেতারা) চরম বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবেন। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে আমি তো খুব স্পষ্টভাবে সরকারকে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে দেখছি। একই সঙ্গে এটা বলে রাখছি- নতুন এ শিক্ষাক্রম মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। বাকিটা সময়ই বলে দেবে।

কোন মন্তব্য নেই:

Beauty

3/Beauty/post-per-tag
Blogger দ্বারা পরিচালিত.