বিশ্বকাপের নবম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছে টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট দল ভারত। আগে ব্যাট করতে নেমে হাশমতউল্লাহ শাহিদী ও আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের জোড়া ফিফটিতে ২৭২ রানের পুঁজি পায় আফগানরা। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে রোহিত শর্মার ঝড়ো সেঞ্চুরিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় আফগান বোলাররা। মাত্র ৬৩ বলে সেঞ্চুরি হাঁকান রোহিত, যা বিশ্বকাপে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। মূলত ভারতীয় অধিনায়কের সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৯০ বল বাকি থাকতেই সহজ জয় তুলে নেয় ‘মেন ইন ব্লু’রা’।
বুধবার (১১ অক্টোবর) দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের দেয়া ২৭৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই ঝড় বয়ে দেন রোহিত শর্মা। ভারতীয় অধিনায়ককে যোগ্য সঙ্গ দেন ঈশান কিষাণ। দু’জনে মিলে গড়েন ১৫৬ রানের জুটি। ফিফটি মিসের হতাশা নিয়ে সাজঘরে ফেরেন ঈশান। রশিদ খানের গুগলিতে এজ হয়ে ইব্রাহীম জাদরানের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৪৭ রানের ইনিংস খেলে। তবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করা রোহিত ঠিকই সেঞ্চুরি তুলে নিন। রশিদের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে করেছেন ৮৪ বলে ১৬ বাউন্ডারি ও ৫ ছক্কায় করেন ১৩১ রান।
ঈশান ফিরলেও অবিচল ছিলেন রোহিত। দেড়শ ছোঁয়ার সুযোগও ছিল তার সামনে। তবে ভারতের অধিনায়ককে সেটি করতে দেননি রশিদ খান। আফগান স্পিনারের ফ্লিপারে হাঁটু গেড়ে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন রোহিত। বেশ কয়েকটি রেকর্ড ভেঙে রোহিত ফেরেন ১৩১ রানের ইনিংস খেলে। শেষ দিকে হাফ সেঞ্চুরএরেতুলে নেন ভিরাট কোহলি। ৫৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া ভারতের সাবেক অধিনায়ক অপরাজিত ছিলেন ৫৫ রানে। তাকে সঙ্গ দেয়া শ্রেয়াস আইয়ার অপরাজিত ছিলেন ১৮ রানে। আফগানিস্তানের হয়ে দুটি উইকেট নেন রশিদ খান।
এই ম্যাচে তিনটি রেকর্ড ভাঙেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত। মাত্র ২৯ বলে ৭টি চার ও ১ ছক্কায় পূর্ণ করেন অর্ধশতক। এরপর দ্রুত গতিতে রান তুলে পৌঁছে যান শতকের ঘরে। মাত্র ৬৩ বলে পূর্ণ করে ফেলেন সেঞ্চুরি। বিশ্বকাপে যা এখন ভারতের পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরি।
এর আগে প্রায় ৪০ বছর আগে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কপিল দেব করেছিলেন ৭২ বলে সেঞ্চুরি। এছাড়া ভারতের পক্ষে ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির তালিকায় রোহিত এখন পাঁচ নম্বরে। শুরুতে ১৭ রান করে হয়েছেন ভারতের পক্ষে বিশ্বকাপে দ্রুততম ১ হাজার রানের মালিক। পেছনে ফেলেছেন শচীন টেন্ডুলকারকে। যিনি বিশ্বকাপে ২০ ইনিংসে পূর্ণ করেন ১ হাজার রান। রোহিতের উপরে আছেন সমান ১৯ ইনিংস খেলা ডেভিড ওয়ার্নার।
এখানেই শেষ নয়, রোহিত ভেঙেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্রিস গেইলের ৫৫৩ ছক্কার রেকর্ডও। ইনিংসের অষ্টম অভারের পঞ্চম বলে নাভিন উল হককে ডিপ স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে পেছনে ফেলেন উইন্ডিজ তারকাকে।
এর আগে, টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ভালো শুরুর আভাস দেন আফগান দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহীম জাদরান। তবে তাদের জুটি বেশি বড় করতে দেননি ভারতীয় পেসার জসপ্রিত বুমরাহ। ডানহাতি এই পেসারের ব্যাক অব লেন্থ ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে থাকা লোকেশ রাহুলের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ২২ রান করা ইব্রাহীম। তার বিদায়ে ভাঙে ৩২ রানের উদ্বোধনী জুটি।
দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা গুরবাজও পারেননি ইনিংস বড় করতে। হার্দিক পান্ডিয়ার শর্ট লেন্থ ডেলিভারিতে পুল শত খেলেন গুরবাজ। ডিপ ফাইন লেগে দাঁড়িয়ে থাকা শার্দুল ঠাকুর দারুণ দক্ষতায় ক্যাচ লুফে নেয়ায় সাজঘরে ফেরেন এই আফগান ওপেনার। ২৮ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২১ রান করেন গুরবাজ। ভালো শুরু পেয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি রহমত শাহও।
শার্দুলের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েছেন ১৬ রান করা এই ব্যাটার। এরপর দলের হাল ধরেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদী ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই। ১২৮ বলে ১২১ রানের জুটি গড়েন তারা। ৬৯ বলে দুই বাউন্ডারি ও চার ছয়ে ৬২ রান করা ওমরজাইকে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙ্গেন হার্দিক পান্ডিয়া। ৫৮ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৭তম ফিফটি পাওয়া শাহিদী ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। তবে কুলদীপ যাদবের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। তার আগে আফগান অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৮০ রান।
শেষ দিকে আর কেউ সেভাবে আলো ছড়াতে পারেননি। মোহাম্মদ নবি ১৯ এবং রশিদ খান ১৬ রান করলে ২৭২ রানে থামে আফগানিস্তানের ইনিংস। ভারতের হয়ে চারটি উইকেট শিকার করেন জাসপ্রিত বুমরাহ। দু’টি উইকেট নেন হার্দিক পান্ডিয়া। একটি করে উইকেট শিকার করেন শার্দুল ঠাকুর ও কুলদীপ যাদব।
কোন মন্তব্য নেই: